» কৌণিক এবং বৃত্তাকার লিপি

প্রাবন্ধিক :

ভারত একটি বহ‍‍ুভাষিক দেশ। মূলত এই ভাষাগ‍‍ুলি ইন্দো-আর্য ভাষা এবং দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা থেকে উদ্ভূত। এই ভাষাগ‍‍‍ুলির মধ্যে কয়েকটি ভাষার নিজস্ব লিপি থাকলেও অনেক ভাষাই শ‍‍ুধু কথ্য ভাষা হিসাবেই থেকে গিয়েছে। অনেক ভাষা আবার লুপ্তও হয়েছে। আবার এমনও দেখা যাবে যে একটি লিপির সাহায্যে একাধিক ভাষা লেখা হচ্ছে।

এই বিভিন্ন ভাষার লিপির ছা‍ঁদ লক্ষ করলে দেখা যাবে যে তা মূলত দুই ধরনের। একটি কৌণিক এবং অন্যটি বৃত্তাকার। আরও লক্ষ করলে বোঝা যাবে যে একমাত্র ওড়িয়া এবং উর্দু লিপি ছাড়া ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে উদ্ভূত ভাষাগ‍‍ুলির লিপি কৌণিক। আর দ্রাবিড় বা দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাগ‍‍ুলির লিপি বৃত্তাকার। ওড়িয়া লিপির ধা‍ঁচের সঙ্‍গে দক্ষিণ ভারতীয় লিপির ধা‍ঁচে যথেষ্ট মিল দেখা যায়। উর্দু লিপি সেদিক থেকে একেবারেই আলাদা। তাছাড়া একমাত্র উর্দু ভাষা ছাড়া অন্য সব ভারতীয় ভাষা বা‍ঁ দিক থেকে শ‍‍ুর‍‍ু হয়ে ডানদিকে এগিয়ে যায়।

কিন্ত‍‍ু লিপির ছা‍ঁদের এই বিভিন্নতার কি কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ আছে? একটু দেখে নেওয়া যাক। প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন লিপির উদ্ভব হয়নি তখন মানুষ তাদের মনের ভাব বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে অন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করত। গ‍‍ুহার ভিতরের নানা ধরনের চিত্র আজও সেই সাক্ষ্য দেয়। ভাষা বিজ্ঞানীরা বলেন যে চৈনিক লিপিও মূলত চিত্রকল্প। গ‍‍ুহাচিত্রের পর মানুষ গ‍‍ুহার বাইরে এসে বিভিন্ন লিপির মাধ্যমে সকলকে জানানোর জন্য বিভিন্ন অনুশাসন খোদাই করা শ‍‍ুর‍‍ু করল (শিলালিপি)। এই লেখা হত পাথরের উপর আর লেখা হত পাথর বা লোহার তৈরি লেখনীর মাধ্যমে। কিন্ত‍‍ু এই লেখা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া এগ‍‍ুলো ব্যক্‍তিগত সংগ্রহে রাখারও কোনও উপায় ছিল না। এই অসুবিধা নেই এমন কোনও লেখার মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা থেকেই পাতায় লেখার চল।

পাতা। হ্যা‍ঁ, গাছের পাতার উপরেই শ‍‍ুর‍‍ু হল লেখা। কিন্ত‍‍ু যেকোনও পাতায় তো আর লেখা সম্ভব নয়। তাই শ‍‍ুর‍‍ু হল লেখার উপযোগী পাতার খো‍ঁজ করা। এই বিষয়েও দক্ষিণ ভারত এবং অন্যান্য ভারতীয় অঞ্চলে বেশ পার্থক্য লক্ষ করা গেল। হিমালয় এবং তার সন্নিহিত অঞ্চলে তখন প্রচুর ভূর্জ গাছ (বার্চ) জন্মাত। তাই উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিম ভারতে ভূর্জপত্রের উপর শ‍‍ুর‍‍ু হল লেখা। আলবির‍‍ুণী অবশ্য লিখেছেন তূর্জ গাছ। পত্র বা পাতা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে লেখা হত ভূর্জ গাছের ছালের উপর। ওই ছাল সংগ্রহ করে তা মাপ অনুযায়ী কেটে প্রথমে তেল মাখিয়ে পালিশ করা হত। তারপর পাথর বা ওই জাতীয় শক্‍ত কিছু দিয়ে ঘষে ঘষে তা মসৃণ করা হত। মাঝখানে একটা ছিদ্র করে তাতে দড়ি দিয়ে পাতাগ‍‍ুলো বা‍ঁধা হত। অনেক সময় উপরে এবং নিচে দুটো শক্‍ত কাঠের পাটাতন দিয়ে বা এক টুকরো কাপড় দিয়ে পাতাগ‍‍ুলো বে‍ঁধে রাখা হত। লেখার সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করা হত কলম আর কালি। এই ধরনের সবচেয়ে প্রাচীন পুথি যা আবিষ্কৃত হয়েছে তা হল খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় শতকের খরোষ্ঠী লিপিতে লেখা প্রাকৃত ধম্মপদ। এছাড়াও অগ‍‍ুর‍‍ু গাছের ভিতরের ছাল থেকে লেখার পাতা তৈরি হত।

অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতে ভূর্জ গাছ পাওয়া যেত না। সেখানে ব্যবহার করা হত তালপাতা। তালপাতা প্রথমে শ‍‍ুকিয়ে নিয়ে তারপর ভিজিয়ে বা ফুটিয়ে আবার শ‍‍ুকিয়ে তা লেখার উপযোগী করে নেওয়া হত। শিরা থেকে ভা‍ঁজ করে প্রয়োজনমতো কেটে পুথির পাতা তৈরি করা হত। আর লেখনী ছিল তীক্ষ্ণাগ্র লৌহ শলাকা, অর্থাৎ লোহার ছুঁচ। কিন্ত‍‍ু দেখা গেল যে তালপাতার উপর ওই ধরনের ছুঁচ দিয়ে কৌণিক হরফগ‍‍ুলো লিখলে পাতার কিছুটা কেটে একটা অংশ পড়ে যাচ্ছে। একটু বুঝিয়ে বলা যাক। যদি লেখা হয় ‘ব’, তবে তা লেখার পর ব-এর আকৃতিটুকু থাকলেও তার ভিতরের অংশ খসে পড়ে যাচ্ছে। ফলে অপর পৃষ্ঠায় কিছু লেখা যাচ্ছে না। এই সমস্যা দূর করার জন্য শ‍‍ুর‍‍ু হল বৃত্তাকার হরফ। এইভাবে বৃত্তাকার হরফ খোদাই করে তার উপর কালি বুলিয়ে হরফগ‍‍ুলোকে দৃশ্যমান করে নেওয়া হত। তবে মজার কথা যে পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু কৌণিক হরফে লেখা তালপাতার পুথিও কিন্ত‍‍ু আবিষ্কৃত হয়েছে। হয়তো সেগ‍‍ুলো কলম আর কালি দিয়ে লেখা।

তামিল তুলনামূলকভাবে বহ‍‍ু পুরোনো ভাষা হলেও ওই লিপিতে লিখিত তালপাতার খুব বেশি পুরোনো পুথি পাওয়া যায় না। এর কারণ হয়তো গরম আবহাওয়ায় ওই পুথি সেভাবে সংরক্ষিত করা যায়নি। অন্যদিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে ভূর্জপত্রের উপর কৌণিক হরফে লেখা পুথিগ‍‍ুলো আবিষ্কৃত হয়েছে নেপাল বা তিব্বতের মতো ঠান্ডা জায়গায়। আর এর ফলে বোধহয় ধারণা করা যায় যে এইসব পুথিগ‍‍ুলো সংরক্ষণে আবহাওয়া একটা বড়ো ভূমিকা পালন করেছে।

৩ Comments

  1. Interesting take on the evolution of chance-based games! The ‘BossJL’ platform seems to really lean into that history, creating a unique experience. Curious to see how they balance tradition with modern tech – check out bossjl download for a look! It’s fascinating how platforms are becoming curated experiences.

  2. Scratch cards are such a fun, quick thrill! Reminds me of the fast-paced action at a boss77 casino – easy to pick up & play, and always a little suspenseful. Seems like Boss77 makes getting started pretty simple too, with app downloads & easy funding! 👍

  3. Basic strategy really shifts your perspective! Seeing those probabilities makes all the difference. I’ve been exploring platforms like nn77 login – their data-driven approach seems to prioritize a solid player experience, which is key for improvement.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *