রাজনৈতিক লোকেরা বারম্বার একই ভুল কেন করেন? তাদের উচিত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া—অথচ প্রাচীন ইতিহাস তো দূরের কথা, তারা সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকেও শেখেন না।
২০০১ সালের পর তারেকপন্থী বিএনপি আওয়ামী লীগকে নিঃচিহ্ন করার জন্য ২১শে আগস্টের ঘটনার মত ভয়ানক ঘটনার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তিনি সফল হননি!
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জামায়াতকে বিলুপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, কিন্তু আধাপথেই তারা থেমে গিয়ে বিএনপিকে বিলুপ্তির চিন্তা করেন এবং গোপনে-অগোপনে জামায়াতকে প্রশ্রয় দান করেন। তাদেরও দুটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।
বিলুপ্তিকামী রাজনৈতিক নেতাদের চিন্তা করা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াত কেবলই নেতা নির্ভর রাজনৈতিক দল নয়। বাংলাদেশে আদর্শের রাজনীতি নেই, তাই জনগণও কোন আদর্শের পূজারী নয়—তবুও লোকেরা দলগুলোকে ভালবাসে, ভালবেসে দলের জন্য জীবন দিতেও কুণ্ঠিত হয় না অনেক সমর্থত।
যেদেশে আদর্শহীন রাজনৈতিক দলের জন্য জীবন দিলেও শহীদ হওয়া যায়, সে দেশে কোন রাজনৈতিক দলকে নিঃচিহ্ন করে দেওয়া সহজ কাজ নয়, বরং অসম্ভব যে সেটাও প্রমাণিত।
ইতোঃপূর্বে আমরা দেখেছি, এবং সম্ভবত ভুলেও যাইনি, নেতা-কর্মীর উপর দমন-নিপীড়ন, তাদের গুমখুন করেও কোন রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ড. ইউনুস আর তার সাঙ্গপাঙ্গেরা কী করে ভাবছেন যে সেই পুরোনো তরিকায় আওয়ামী লীগকে নিঃচিহ্ন করে দিবেন?
এখন সেই পুরোনো যুগ আর নেই, এবং ফিরিয়ে আনাও সম্ভব নয় যে রাজা মেরে ফেললেই রাজ্য দখল হয়ে যাবে! সেকালে রাজাপ্রজার সম্পর্ক ছিল মূলত খাজনায় সীমিত—কে রাজা হল, কে গেল তাতে জনগণের সামান্যই চিন্তা ছিল। কিন্তু একালে তো তা নয়, একালে রাজার চেয়ে প্রজারা বরং বেশি রাজনৈতিক, রাজা বা তার ঘনিষ্টেরা দল পাল্টায়, মত পাল্টায়—প্রজা বা জনগণ এত সহজে দল বা মত পাল্টায় না। তারা বরং হাত থেকে লাঠি পড়ে গেলে মনে মনে লাঠি খেলতে থাকেন!
কিছু মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন, এমনকি দলের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের থেকেও। এর পরিণাম কী হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি।
আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের কমপক্ষে ত্রিশ শতাংশ মানুষের ভালবাসা রয়েছে; এবং এই ভালবাসা একেবারে ঠুনকো কিছু নয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতকে যারা ভালবাসে—দল পাপে নিমজ্জিত হলেও এদের ভালবাসায় ঘাটতি হবে না।
কিন্তু ড. ইউনুস ও তার সাঙ্গপাঙ্ককে কারা ভালবাসে? একটা বিশেষ মুহূর্তে, একটা বিশেষ দাবীর সাথে দলমত নির্বিশেষে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এদের সমর্থন করেছে। এখন যে মাস্টার-মাইন্ড বা কোটা বিরোধী আন্দোলনকে হাসিনা হঠানোর গোপন ষড়যন্ত্র বলা হচ্ছে, এই কথা পূর্বে প্রকাশ পেলে এত সমর্থন তারা পেত না।
জনগণ মাঝে মাঝে এমন আবেগী হয়ে যায়, ১৯৭১ সালেও জনগণের এমন আবেগ তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সমর্থন জানাতে বাধ্য করেছিল। গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি বিশেষ শ্রেণী ছাড়া সারা দেশের মানুষ সমর্থন জানিয়েছিলেন। তদ্রূপ কোটা বিরোধী আন্দোলনেও জানিয়েছেন। কিন্তু এই আবেগ স্থায়ী কিছু নয়, বরং আবেগ ফুরিয়ে গেলে প্রত্যেকে নিজ নিজ পছন্দের রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থকে প্রত্যাবর্তন করেন।
ড. ইউনুস ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের যারা ভালবাসেন, তারা কারা? তাদের সকলেই আওয়ামী লীগ বিরোধী, এটা সত্য—কিন্তু তারা ড. ইউনুস গংদের নয় বরং নিজ নিজ দলের প্রয়োজনেই তাদের প্রতি ভালবাসা দেখাচ্ছেন। এবং এই ভালবাসা এত ঠুনকো যে আজ ইউনুস গং জামায়াত বা বিএনপির প্রতি টু-শব্দটি করুন, তখন তারা টের পাবেন লাথি ও লাঠি কোথা হতে আসে। ইউনুসেরা হয়ত ভাবছেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরব থাকলেই বুঝি এই ভালবাসা স্থায়ী হয়ে যাবে, এটা তবে ভুল ভাবনা। আজ তিনি প্রকাশ্যে বিএনপিকে সমর্থন করুন, সম্পর্ক বদলে যাবে চোখের পলকে—আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মিলিত হয়েই তার বিরদ্ধে লাঠি হাতে তুলে নিবেন; অথবা তিনি প্রকাশ্যে জামায়াতকে সমর্থন করুন, দেখবেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে তার কী হেনস্থা করে।
আসলে ইউনুস সাহেবেরা এখন ফাটা বাঁশের চিপায় আছেন, একটু নড়লেই পাছা-বিছা থেঁতলে যাবে। সাপের চুঁছো গেলার মত একটা ত্রাহী ভাব দেখতে পাচ্ছি তাদের চোখে! মনের এই ত্রাসকে ঢেকে রাখার জন্যই তারা বাজে বকবক করছে—মাথা ঢাকতে গিয়ে পাছার কাপড় যে বিপৎসীমার উপরে তুলে ফেলছেন সেটা টের পাচ্ছেন না।
অথবা, তারা খুবই চতুর লোক, কোটার বিরোধী আন্দোলনকে বৈষম্য বিরোধী এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছিলেন জনগণের অলক্ষ্যেই। এখন আওয়ামী লীগ বিরোধী, শেখ মুজিব বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কথাবার্তা বলে জনগণকে মশগুল করে রেখে হয়ত গোপনে আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ফেব্রুয়ারিতে যখন ঠিক পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে উপচে পড়ে তখনই সেখানে পর্যটন নিষিদ্ধের ঘোষণা এসেছে। তবে কি হাসিনার কথাই ঠিক প্রমাণিত হবে? ইউনুস সেন্ট মার্টিনকে আমেরিকার ঘাঁটিতে পরিণত করবেন?