রাজা-বাদশাহদের যুগে কিছু মানুষের পুরুষত্ব নষ্ট করে নপুংশক বানান হত, মোঘল প্রাসাদ, ভারতবর্ষে নবাবদের প্রাসাদ এবং ইরানে এই ধরনের লোকেদের বলা হত খোজা, ওসমানীয় প্রাসাদে তারা পরিচিত ছিল আগা নামে।
তাদের প্রধান কাজ ছিল হেরেম পাহারা দেওয়া। প্রাসাদে গুরুত্বপূর্ণ নারীদের খাদেম হিসেবে এক বা একাধিক খোজা বা আগা থাকতেন। তাদের অনেকেই ভাল যোদ্ধা, কূটনীতিবিদ ও ধনবান ছিলেন। দরিদ্র লোকেরা আয়েশী জিন্দেগীর লালুচে খোজা বা আগা হত। অনেকে তীব্র যন্ত্রনা অথবা ক্ষত না শুকানোর কারণে মারাও যেতেন।
ভারতবর্ষে বাদশা-নবাবের শাসনাবসান হলে বিপুল সংখ্যক খোজা বেকার হয়ে পড়ে—যেহেতু অস্ত্রচালনা তাদের জানা ছিল, তারা দলবদ্ধ হয়ে ডাকাতি-লুণ্ঠন শুরু করে। ইংরেজ সরকার বহু তেল-খড় পুড়িয়ে এদের দমন করলেও একেবারে নির্মূল করতে পারেনি! এরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রদেশে চলে যায়। এরপর প্রদেশ ভেদে এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম হয়। কিন্তু বৈধ আয়ের উৎস না থাকায়—তাদের গোপন দুষ্কৃতি চালু থাকে।
এককালে যাদের আয়েশী জিন্দেগী ছিল, বাদশা-নবাবেরা যাদের কাছে সম্পদ গচ্ছিত রাখতে ভয় পেত না, তারা হয়ে গেল ভিখারী, ডাকাত সম্প্রদায়।
খোজা বা আগাদের সকলেই যে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরুষত্ব নষ্ট করতেন তা নয়, তাদের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে পুরুষত্বহীন লোকেরাও ছিল।
প্রাসাদী খোজারা জৌলুষহীন হওয়ার পর তাদের সাথে এসে জোটে স্ত্রী লক্ষণাক্রান্ত হিজড়ারাও। শুরুতে নাচ-গানের সুবিধার জন্য হলেও পরে বিকৃত যৌনাচার পেয়ে বসে তাদের। সে সিলসিলা এখনও চলমান।
বর্তমানে তৃতীয় লিঙ্গ বলি আর যাই বলি, শহরে-গ্রামে, যানবাহনে, বিয়ে বা শিশুর জন্মের পর হিজড়ারা কী করে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শোনা যায়, অনেকে কাজ-কর্ম জোটাতে না পেরে গোপনে অপারেশন করে হিজড়াদের সাথে মিশে যায়। এর জন্য ঢাকায় দালালচক্রও রয়েছে!
বহু বছর যাবৎ হিজড়াদের বিষয়ে সরকার বা সমাজ মাথাঘামায়নি! বেশ কয়েক বছর যাবৎ এনজিওদের কার্যক্রমে সমাজের মূলধারায় হিজড়াদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এতে সুবিধা কতটুকু হয়েছে তা নজরে না এলেও এনজিওগুলো হিজড়াদের জাতে তুলতে গিয়ে যে রূপান্তরকামী সমস্যার সৃষ্টি করেছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
হিজড়াদের সুস্থ্য সমাজে ফিরিয়ে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করার সদিচ্ছা থাকলে সরকার ও এনজিওদের সেই সুযোগ আছে। ব্রাকের কথাই বলি,— ব্রাক চাইলে আড়ং ও তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে হিজড়াদের চাকরি দিতে পারে। সরকার চাইলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসাবে তাদের নিয়োগ দিতে পারে। পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীতে তাদের কাজ দিলে, আমার মনে হয় হিজড়ারা সফলতা দেখাতে সক্ষম হবে। মেট্রোসহ ট্রেনের টিকেট চেকারদের কাজ হিজড়াদের দিলে সরকার লাভবান হতে পারে।
স্বভাবতই হিজড়াদের চাহিদা খুব বেশি হবে না, আমৃত্যু স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের নিশ্চয়তা পেলে তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পাঠ্যপুস্তকে নানা নীতিকথামূলক গল্প প্রবন্ধ পড়ে কতজন বাংলাদেশি সৎমানুষ হয়েছে তার প্রমাণ করার সুযোগ নেই! শরীফার গল্প পড়ে হিজড়াদের প্রতি সুস্থ শিশুরা যে খুব মানবিক হবে এই আশার গুড়ে বালি। এই নিয়ে হৈচৈ করা যাবে, দলে দলে বিভক্ত হওয়ার জন্মগত স্বভাব বাঙালির, তারা দলে দলে কোন্দল করতে পারবে। এতে হিজড়াদের মানবিক মর্যাদা যেমন বাড়বে না, তাদের জীবনযাত্রারও উন্নয়ন হবে না। হিজড়াদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে যে পরিবার তাদের বোঝা মনে করে তাড়িয়ে দিয়েছে সেই পরিবারই তাদের পায়রুবি করবে। যে সমাজ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে, অবহেলা করে সেই সমাজ তাদের সম্মানের চোখে দেখবে।
যারা হিজড়াদের অধিকার নিয়ে হৈচৈ করছেন, তারা হলফ করে বলুন তো, কোনদিন কোন হিজড়াকে ডেকে পাশে বসিয়েছেন? ভালবেসে খেতে দিয়েছেন? কোনদিন বলেছেন, তুমিও আমার মত মানুষ, এসো তোমাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিচ্ছি তুমি কাজ করে খাও। কোনদিন বলেছেন, ধরো, কয়টা টাকা নাও, চাঁদাবাজি না করে ঝালমুড়ি বিক্রি করে আয় করো!
গলাবাজি করা সহজ, এই যেমন আমি করছি— হিজড়া তৃতীয় লিঙ্গ নয়, ক্লীব নয়,— সে কারো পুত্র, কারো কন্যা! রাষ্ট্র, সমাজ, কথিত হিজড়ার মানবিক অধিকারে সোচ্চার লোকেরা কোনদিন খোঁজ নিয়েছেন, হিজড়ারা মৌরসি সম্পদ পায় কিনা? এইসব আপনারা বলবেন না, কেননা, এইসবে আপনাদের লাভ কিছু নেই। লোকেরা লাভের আশায় কুত্তার গাড়িও দৌঁড়ায়।