মান্তু বলল, ‘আচ্ছা দাদু, তুমি তো বললে যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে না জুড়লে তা বাক্যে ব্যবহারই করা যাবে না। আবার বললে কোন শব্দে শূন্য বিভক্তি থাকলেও তা বাক্যে ব্যবহার করা যাবে। তাহলে তো বিভক্তির কোন দরকারই নেই। শূন্য বিভক্তি দিয়েই সব কাজ সেরে নেওয়া যাবে।’
না, সব শব্দেই যদি শূন্য বিভক্তি লাগিয়ে বাক্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাহলে বাক্যের মানেই বোঝা যাবে না। যদি বলি, “মান্তু মাটি বস্ ছবি আঁক্”। এই বাক্যটার কোন মানে কি তোরা বুঝতে পারছিস? উত্তরটা হবে “না”। কিন্তু যদি বলি,’ মান্তু মাটিতে বসে ছবি আঁকছে’।
– হ্যাঁ, এবার বাক্যের মানে বোঝা যাচ্ছে। – বুতান আর মান্তু দুজনেই একসঙ্গে বলে ওঠে।
– এবার বুঝতে পারলি কারণ এখন শব্দ আর ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি লাগান হয়েছে। বাংলা ভাষায় ক্রিয়া ছাড়াও সম্পূর্ণ বাক্য হয় কিন্তু বিভক্তি ছাড়া বাক্যের মানেই বোঝা যাবে না। প্রয়োজনে অন্তত শূন্য বিভক্তি লাগাতে হবে।
– কিন্তু ইংরেজিতে তো ক্রিয়াপদ ছাড়া কোন বাক্য লিখলে তা ভুল। বাংলায় ক্রিয়া ছাড়া কয়েকটা বাক্যের উদাহরণ দাও না। – মান্তু আর্জি জানায়।
– ‘মাঠে মাঠে সবুজ ফসল আর নদীতে ছোট বড় নানান ধরণের নৌকা। ড. ব্যানার্জি একটা নৌকার সওয়ারি। নৌকাটা সবুজ রঙের। প্রসঙ্গত ড. ব্যানার্জি একজন সুচিকিৎসক।’ ক্রিয়াপদ আছে?
– আচ্ছা, অনেক সময় শব্দের শেষ ‘টি’ বা ‘টা’ লাগান হয়। এই যেমন বললে ‘নৌকাটা’। তাছাড়া আমরা তো প্রায়ই বলি,’লোকটা’,’ বইটা’ এগুলোও কি বিভক্তি? – বুতানের প্রশ্ন।
– না। এগুলো নির্দেশক। এগুলো ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বা পরিমাণ নির্দেশ করে। তাছাড়া এগুলো ওই ব্যক্তি বা বস্তুকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। ধর, কেউ বলল, “এই পথ দিয়ে লোক যাতায়াত করে।” মানে এটা লোক চলাচলের রাস্তা। যে কোন লোকই এই পথে যেতে পারে বা অনেক লোকই এই রাস্তা দিয়ে যায। কিন্তু যদি বলি, “এই পথ দিয়ে লোকটি যাতায়াত করে”। তার মানে হবে একজন বিশেষ কোন লোক এই পথে যাতায়াত করে। এই নির্দেশকগুলো একবচনে টি, টা, খানি, খানা আর বহুবচনে গুলি, গুলা, গুলো এই রকম হয়ে থাকে।
টি আর টা ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে যোগ করা গেলেও খানি, খানা এগুলো বস্তুর পরেই বসে। অবশ্য কোন কোন সময় এই নির্দেশিকাগুলো বস্তুর আগেও বসে যায়। যেমন, ‘খানআষ্টেক রসগোল্লা খেয়ে পেটটা ভরে গেছে।’ বা ‘খানকতক নলকূপ এই গ্রামে বসানো দরকার।’ এই সুযোগে তোদের বলে দিই এই নির্দেশকগুলো শব্দের পরে বসলে সবসময় শব্দের সঙ্গে লেগে থাকবে। অর্থাৎ ‘বইখানা’ বা ‘বইগুলো’ এই শব্দগুলো ‘বই খানা’ বা ‘বই গুলো’ এভাবে ভেঙে লেখা চলবে না। আবার ‘খানআষ্টেক ‘বা’ খানকতক’ এগুলোকেও আলাদা করে লেখা চলবে না। আবার এই নির্দেশকের সঙ্গেও অনেক সময় বিভক্তি লাগানো হয়। যেমন, ‘লোকটাকে আমি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছিলাম। লোকটা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল।’ বা ‘তুই তো দেখছি বইখানাকে ছিঁড়েই ফেলেছিস।’ এই বাক্যগুলোতে দেখ লোক+টা (নির্দেশক) + কে (বিভক্তি), বই + খানা (নির্দেশক) + কে (বিভক্তি) ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ‘লোকটা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল’ এই বাক্যে’ ‘লোকটা’ র সঙ্গে কোন বিভক্তি নেই অর্থাৎ শূন্য বিভক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
এবার অনুসর্গ সম্পর্কে দু একটা কথা তোদের জানিয়ে দিই। অনুসর্গ সাধারণত অব্যয় বা অসমাপিকা ক্রিয়া।
বুতান বলল, ‘সেকি দাদু, অসমাপিকা ক্রিয়াও অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহার করা যায়?’
– অবশ্যই যায়। ‘তোর চেয়ে মান্তু বয়সে ছোট।’ এই বাক্যে ‘চেয়ে’ অব্যয়। আবার ‘কতদিন ধরে তোকে কথাটা বলছি’ এখানে ধরে < ধরিয়া একটা অসমাপিকা ক্রিয়া।
অনুসর্গের আগের বিশেষ্যটি বিভক্তি যুক্ত অথবা বিভক্তি ছাড়াও হতে পারে। কিন্তু অনুসর্গের আগে সর্বনাম থাকলে তা বিভক্তি যুক্ত হতেই হবে। আর একটা কথা মনে রাখিস এই অনুসর্গগুলো সাধারণত বিশেষ্যের পরে বসলেও কখনও কখনও বিশেষ্যের আগেও বসে। যেমন, ‘বিনা উপার্জনে কীভাবে বাঁচব?’ উপার্জন শব্দের আগে বসলেও ‘বিনা’ কিন্তু উপার্জনের অনুসর্গ।
– দাদু, এগুলো একটু উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও না। – মান্তু পরিষ্কার করে সব কিছু বুঝে নিতে চায়।
– ‘ তার চেয়ে অন্য সবাই ভাল। এখানে ‘চেয়ে’ অনুসর্গের আগের সর্বনাম সবসময়ই বিভক্তি যুক্ত হবে।
– তার মানে অনুসর্গ শব্দের পরে যেমন বসে আবার শব্দের আগেও বসে? – বুতানের জিজ্ঞাসা।
– শুধু অনুসর্গ নয়, আমরা তো এখন নির্দেশক কাকে বলে তা শিখে গেছি, এই নির্দেশকগুলোও কখনও কখনও শব্দের আগে বসতে পারে। “বইখানা আজ লাইব্রেরিতে জমা দেওয়া দরকার।” এখানে বইয়ের পরে নির্দেশক ‘খানা’ বসেছে। এই নির্দেশক নির্দিষ্টভাবে বইটাকে যেমন চিহ্নিত করছে তেমনি তার সংখ্যাও কিন্তু বলে দিচ্ছে। আবার যদি বলি, ‘এই বইটার চেয়ে ওই বইটা ভাল।’ এখানে বই + টা (নির্দেশক) + র (বিভক্তি) তারপর চেয়ে (অনুসর্গ) এসেছে। আবার আগে যেমন উদাহরণ দিয়েছি ‘খানআষ্টেক’, ‘খানকতক’ এখানে শব্দের আগে বসেছে।
– আচ্ছা দাদু, কোন শব্দে কোন বিভক্তি লাগবে তার কি কোন নির্দিষ্ট নিয়ম আছে? মানে কোথায়’ র’ বসবে আর কোথায় ‘এর’? – মান্তু প্রশ্ন করে।
– সবসময় নিয়ম অনুযায়ী না হলেও সাধারণভাবে একটা নিয়ম তো আছেই। তবে সব নিয়ম বোঝাতে তো সময় লাগবে তাই আজ নয় অন্য একদিন বলব।