» » ণত্ববিধি

ণত্ববিধি

বুতান বলল, ‘দাদু, তুমিও তো দেখছি ভুল বানান লিখছ। এগুলোকেই বোধ হয়’ স্লিপ অফ পেন’ বলে?

– তা ভুল বানান যে না লিখি তা নয়। অনেক সময় ভুল লিখি সঠিক বানান জানা না থাকার দরুন। আবার অনেক সময়ই অনবধানতার জন্য বানান ভুল হয়ে যায়। তোদের একটা কথা বলি, যদি কেউ বানান ভুল ধরিয়ে দেন তবে তা যাচাই করে ভুলটা অবশ্যই সংশোধন করে নিবি। মনে রাখিস ভুল স্বীকার করার মধ্যে কোন লজ্জা নেই। আচ্ছা, এবার বল কোন বানানটা আমি ভুল লিখলাম।

– দাদা আমাকে বলেছে। এই যে তুমি এখানে লিখেছ “এরপর অসিত বরনকে বরণ করে নেওয়া হল”। – এবার দাদার হয়ে মান্তু এগিয়ে আসে।

– তুমি একই শব্দ একবার দন্তেন্ ন দিয়ে আর একবার মধ্যেন্ ন দিয়ে লিখেছ। দুটোর একটাতো নিশ্চয়ই ভুল। – বুতান ব্যাখ্যা করে।

– না, ওই দুটো বানানই ঠিক আছে। কেন? তা তোদের পরে বোঝাচ্ছি। তার আগে বলি ওই যে বললি ‘দন্তেন্ ন’ আর ‘মধ্যেন্ ন’ এই শব্দগুলো কিন্তু ঠিক নয়।

– কেন? টিভিতে তো আমরা এসব বলতে শুনেছি। – মান্তু এখন তার দাদার সহায়।

– টিভিতে যখন শুনেছিস তখন তো ‘তালবেশ্ শ’, ‘বর্গেজ্ জ’ এগুলোও নিশ্চয়ই শুনেছিস। কিন্তু এগুলো ভুল উচ্চারণ। ‘দন্ত’ শব্দের অর্থ হল দাঁত। আর ‘দন্ত্য’ মানে দাঁত সম্বন্ধীয়। আমরা দাঁতের সাহায্যে যে বর্ণগুলো উচ্চারণ করি তা হল দন্ত্য বর্ণ, যেমন ত, থ, দ, ধ, ন। আর তাই আমরা এই ‘ন’ কে বলি ‘দন্ত্য ন’। আর মূর্ধার সাহায্যে আমরা উচ্চারণ করি যে ‘ন’ তা হল ‘মূর্ধন্য ণ’। ঠিক তেমনি তালু থেকে উচ্চারণ হয় যে ‘শ’ তা ‘তালব্য শ’ আর বর্গের যে ‘জ’ তা ‘বর্গীয় জ’। এই ‘জ’ ছাড়াও আর একটা ‘য’ আছে জানিস তো? তা হল ‘অন্তঃস্থ য’।

এবার ‘বরন’ আর ‘বরণ’ এই বানান দুটো বুঝতে হলে তোদের যা বুঝতে হবে তা হল ব্যাকরণের ‘ণত্ববিধি’। অর্থাৎ কোথায় কোন ‘ন’ বসবে তার নিয়ম। তৎসম শব্দে যদি ‘ঋ’, ‘র’,’ ষ’ এর পর কোন ‘ন’ আসে তবে কয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া সব ‘ণ’ লিখবি।

– ব্যতিক্রম কোনগুলো, দাদু? – মান্তু জিজ্ঞেস করে।

– ব্যতিক্রমের কথায় পরে আসব। আগে কোথায় মূর্ধন্য ণ বসবে তা জেনে রাখ। যেমন ধর, তোরা যদি লিখিস ‘ঋণ’, তাহলে মূর্ধন্য ণ লিখবি। কেননা এখন আমরা জেনে গেছি যে ঋ এর পর আসবে মূর্ধন্য ণ। আবার শুধু ঋ-এর পরই নয় ঋ-কারের পরেও কোন ‘ন’ এলে তা হবে মূর্ধন্য ণ। যেমন:- মসৃণ, তৃণ, ঘৃণা, মৃণাল ইত্যাদি।

– আর ‘র’ এর পরে ‘ণ’ এ রকম কয়েকটা বল। – মান্তু আদেশ করে।

– যেমন:- মরণ, তারণ, স্মরণ, কিরণ, কারণ, শরণ, সরণি, আবরণ, আভরণ, ইত্যাদি শব্দে যেহেতু ‘র’ এর পরে ‘ন’ এসেছে তাই এই ‘ন’ হবে মূর্ধন্য ণ।

তবে শুধু ‘র’ নয়, এই ‘র’ যদি অন্য রূপে আসে তাহলেও হবে মূর্ধন্য ণ।

– ‘র’ এর আবার অন্য রূপ হয় বুঝি? – মান্তু জানতে চায়।

– হয় তো। ধর ‘র’ যদি কোন বর্ণের আগে বসে যুক্তব্যঞ্জন তৈরি করে তখন আমরা বলি ‘রেফ’। আর যদি বর্ণের পরে যুক্ত ভাবে আসে তখন আমরা বলি ‘র-ফলা’। আদতে ওগুলো তো ‘র’। যাই হোক, যা বলছিলাম, ধর, ‘বর্ণ, কর্ণ, পর্ণ, পূর্ণ, স্বর্ণ, বর্ণনা, এই সব শব্দে ‘র’ এর পর, মানে ‘রেফ’-এর পর, ‘ন’ আসাতে তা ণ হয়ে গেছে। আবার তেমনি ঠিক একই কারণে প্রাণ, ভ্রূণ, ঘ্রাণ, ত্রাণ, ব্রণ, দ্রোণাচার্য, মন্ত্রণা, যন্ত্রণা এই সব শব্দেও মূর্ধন্য ণ এসেছে।

– তাহলে তো ‘বরণ’ শব্দে মূর্ধন্য ণ আসবে। তাহলে তো আর একটা ‘বরন’ শব্দে তুমি দন্ত্য ন বসিয়েছ সেটা হবে না। – বুতান তার রায় দিয়ে দেয়।

– আসলে কি জানিস, ‘র’ এর পর মূর্ধন্য ণ আসবে, তবে তা তৎসম শব্দ হলেই। আচ্ছা, তোরা কেউ বলতে পারবি অসিত শব্দের মানে কী?

– অসিত শব্দের মানে কী, দাদু? – মান্তু জিজ্ঞেস করে।

– সিত শব্দের মানে সাদা আর তার আগে একটা ‘অ’ বসিয়ে বিপরীতার্থক শব্দ তৈরি করা হয়েছে। অসিত মানে কালো। আর বরন শব্দটা এসেছে সংস্কৃত ‘বর্ণ’ থেকে। অর্থাৎ অসিত বরন মানে কৃষ্ণবর্ণ। কিন্তু বর্ণ শব্দটা তৎসম হলেও ওই শব্দটা তার রূপ বদলে ‘বরন’ হয়েছে। তাই এটা একটা তদ্ভব শব্দ। আর যেহেতু শুধুমাত্র তৎসম শব্দেই ণত্ববিধি খাটবে তাই এখানে মূর্ধন্য ণ না এসে আসবে দন্ত্য ন। এরকম আরও অনেক শব্দ পাবি। যেমন ‘প্রাণ’ শব্দে মূর্ধন্য ণ হলেও ‘পরান’ শব্দে কিন্তু দন্ত্য ন। আবার ‘কোরান’ একটা বিদেশি শব্দ তাই এখানেও দন্ত্য ন থাকবে।

– আর ‘ষ’ এর পরে ন এলে কেমন হবে সে রকম কয়েকটা উদাহরণ দাও না, দাদু। – মান্তু খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে চাইছে।

– ‘ষ’ তো পরে, ‘র’ – এর পরেও আরও অনেক কিছু বলার আছে। তবে সব একসঙ্গে বললে তো গুলিয়ে ফেলবি তাই আজ আর কিছু বলব না। এর মধ্যে যেগুলি বললাম সেই বিষয়ে আরও অনেক শব্দ ঝুলিতে জুড়ে নে।

মান্তু আর বুতানের প্রশ্নগুলো শুনেই বুঝতে পারি যে ওরা আজকাল অনেক সময়ই বিভিন্ন শব্দ আর তার বানান নিয়ে ভাবছে। এই তো আজ এসেই মান্তু জিজ্ঞেস করল, ‘দাদু, তাহলে’ হয়রান’ শব্দে ‘র’ এর পরেই ‘ন’ এলেও তা দন্ত্য ন হল কেন?’

– আমি তোদের আগেও বলেছি, আবারও বলছি যে ণত্ববিধি অনুযায়ী ‘ণ’ আসবে শুধু তৎসম শব্দেই। ‘হয়রান’ তৎসম শব্দ নয় তাই ‘কোরান’ শব্দে যেমন ‘ন’ তেমনি হয়রান শব্দেও তাই।

– কিন্তু ‘দুর্নাম’, ‘দুর্নীতি’ এই সব শব্দে দন্ত্য ন কেন? এগুলো কি তৎসম শব্দ নয়। – এবার বুতানের প্রশ্ন।

– বাঃ! তোরা আজ খুব ভালো ভালো প্রশ্ন করছিস তো! ওগুলো অবশ্যই তৎসম শব্দ। তবে এই দন্ত্য ন এসেছে অন্য এক নিয়মে। আর এই নিয়মটাও কিন্তু ণত্ববিধির নিয়ম। এই নিয়মটা হল সমাস বা সন্ধি হলে যদি পূর্ব পদের শেষে ‘র’ বা র-জাত বিসর্গ আর পরপদের গোড়ায় ‘ন’ থাকে তবে তা দন্ত্য ন হবে। দাদুভাই দুটো উদাহরণ দিয়েছে। আমি আরও কয়েকটা বলি। যেমন:- হরিনাম, বরানুগমন, দুর্নিবার, ইত্যাদি। তবে সমাস বা সন্ধি হলেও কয়েকটা শব্দে মূর্ধন্য ণ হয়, যেমন, অগ্রণী।

– ‘দুর্নাম’ শব্দে দন্ত্য ন আসার কারণ তো বোঝা গেল তাহলে ‘প্রণাম’ শব্দে কেন ‘ণ’? – মান্তুর আবার জিজ্ঞাসা।

– বাঃ! আজ তো তোরা দেখি তৈরি হয়েই এসেছিস। ‘প্রণাম’ শব্দে ‘ণ’ আসার কারণ এই শব্দটা কোন সমাস বা সন্ধি করে তৈরি হয়নি। প্র একটা উপসর্গ। আর প্র, পরা, পরি, নির্ উপসর্গর পর কোন ন এলে তা সাধারণত মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন, প্রণত, প্রণতি, প্রণয়, প্রণব, প্রণয়ন, পরিণাম, পরিণয়, পরিণত, পরিণাম, নির্ণয় ইত্যাদি।

– আচ্ছা, তুমি সাধারণত মূর্ধন্য ণ হয় বললে কেন? তার মানে কি সবসময় তা হয় না? – মান্তু আরও বিস্তারিত জানতে চায়।

– ঠিকই। কয়েকটা শব্দ আছে যেগুলোর আগে প্র, পরি, নির্ উপসর্গ থাকলেও শব্দের দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন, প্রনষ্ট, পরিনির্বাণ, নির্নিমেষ। এই শব্দগুলোর বানান তোদের আলাদা করে মনে রাখতে হবে।

– দুর্নাম বানানও বুঝলাম, প্রণাম বানানও বুঝলাম। তাহলে কেন ‘প্রমাণ’ শব্দে এল মূর্ধন্য ণ। এখানে তো ‘র’ এর পরেই কোন ন আসেনি। তা তো এসেছে ম এর পরে। – এবার আবার বুতানের প্রশ্ন।

– হ্যাঁ, এর কারণটাও ণত্ববিধিতে বলা আছে। যদি কোন শব্দে র-এর পরে এক বা অনেকগুলি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ বা য়, ব, হ, ং এই সমস্ত বর্ণ থাকে আর তারপর যদি কোন ‘ন’ আসে তাহলে সেই ‘ন’ হয়ে যাবে মূর্ধন্য ণ। যেমন একটা উদাহরণ দিই, রামায়ণ। এই শব্দে ‘র’ – এর পর আ-কার, ম, আ-কার, য় এগুলোর পরে ‘ন’ এলেও এই নিয়মে হয়ে যাবে মূর্ধন্য ণ। আরও দেখ, দর্পণ, , প্রাঙ্গণ, প্রবাহিণী, পরায়ণ এই সব শব্দেও ঠিক ‘র’ – এর পরে না এলেও এই নিয়মে মূর্ধন্য ণ হয়ে গেছে। মনে রাখিস ‘অর্পণ’ কিন্তু ‘অর্জন’।

মান্তু জিজ্ঞেস করল, ‘ তাহলে কি আমাদের ‘র’ আর ন এর মাঝে কোন কোন বর্ণ এলে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হবে তা মুখস্থ করে রাখতে হবে?’

– তা তো হবেই। তবে তোদের আমি একটা সহজ নিয়ম শিখিয়ে দিই। ‘র’ আর ‘ন’ এর মাঝে যদি এমন কোন বর্ণ আসে যেগুলো উচ্চারণ করতে গেলে জিভ মুখের ভেতরের কোন অংশে ছুঁয়ে যায় তাহলে তা দন্ত্য ন হবে। মূর্ধন্য শব্দটা লক্ষ কর। ‘রেফ’-এর পর যেই উচ্চারণ করলাম ‘ধ’ সঙ্গে সঙ্গে জিভ লেগে গেল দাঁতে ফলে দন্ত্য ন রয়ে গেল, তা আর মূর্ধন্য ণ হল না। এই যে একটু আগে ‘অর্জন’ শব্দটা বললাম সেটাও তাই মানে ‘রেফ’ – এর পর জ বললেই জিভ লেগে গেল তালুতে আর তাই বসল দন্ত্য ন। কিন্তু ‘অর্পণ’ শব্দে প উচ্চারণে জিভ মুখের ভেতর কোন অংশে লাগল না আর সেই জন্য এসে গেল মূর্ধন্য ণ। এখানেও দেখবি বেশ কিছু শব্দ সমাস হলেও দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়ে যায়। যেমন, অগ্রহায়ণ, উত্তরায়ণ, চান্দ্রায়ণ, নারায়ণ, শূর্পণখা, ইত্যাদি। আবার লক্ষ কর অপরাহ্ণ, পরাহ্ণ বা পূর্বাহ্ণ এই সব বানানে মূর্ধন্য ণ এলেও মধ্যাহ্ন, সায়াহ্ন বানানে কিন্তু দন্ত্য ন। কারণ এই শব্দগুলোতে ‘র’ বা ‘রেফ’ নেই।

আর কয়েকটা কথা বলে রাখি ট, ঠ, ড, ঢ – এর আগে যুক্তভাবে কোন ন এলে তা সবসময় মূর্ধন্য ণ। যেমন, বণ্টন, লণ্ঠন, লুণ্ঠন, লণ্ডভণ্ড, ভণ্ড, কাণ্ডার ইত্যাদি। আবার তেমনি ত, থ, দ, ধ – এর আগে যুক্ত ভাবে কোন ন এলে তা সবসময় দন্ত্য ন, এমনকি তা ‘র’ – এর পরে এলেও। যেমন, ক্রান্তি, বৃন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন, ইত্যাদি।

‘আজ আমরা ষত্ববিধি শিখব, তাই না দাদু? – আজ মান্তুর ঘোষণা।

– সে তো শিখবই, তবে তার আগে ণত্ববিধি বিষয়ে আরও দু-একটা কথা বলে নিই।

-ণত্ববিধি এখনও শেষ হয়নি? – মনে হল বুতানও এবার বোধ হয় ধৈর্য হারাচ্ছে।

– এই বিষয়ে আরও অনেক কিছু বলা যায়। তবে তোদের খুব সংক্ষেপে কয়েকটা কথা বলি। বাংলা ক্রয়াপদগুলিতে র-এর পরে ‘ন’ এলেও তা মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন:- ধরুন, ধরবেন, মারুন, মারবেন, পারবেন, সরুন, করুন, ইত্যাদি।

– কিন্তু আমি তো ‘করুণ’ বানান অভিধানে দেখেছি। – বুতান যে এখন নিয়মিত অভিধান দেখছে তা বোঝা গেল।

– তুই ঠিক দেখেছিস। তবে এ ‘করুণ’ তো ক্রিয়াপদ নয়, এ হল বিশেষণ। “সে করুণ চোখে তাকাল।” আর এটা একটা তৎসম শব্দ। তাই এই বানানে ণত্ববিধি অনুযায়ী মূর্ধন্য ণ আসবে।

এ ছাড়া কতকগুলি শব্দ আছে যেগুলির বানানে স্বভাবতই মূর্ধন্য ণ আসে, যাকে আমরা বলতে পারি নিত্য মূর্ধন্য ণ। যেমন:- গণেশ, মাণিক্য, গণ, নিপুণ, পুণ্য, ফণী, বণিক, বাণিজ্য, লবণ, গৌণ, কণা, পণ্য ইত্যাদি।

– দাদু, তুমি যে উদাহরণগুলো দিলে তার সবগুলোই দেখছি ‘ণ’ এসেছে ক-বর্গ আর প-বর্গের বর্ণের পরে। এর কি কোন বিশেষ কারণ আছে? – বুতানের জিজ্ঞাসা।

– ঠিক তা নয়। কেননা আরও কতগুলো শব্দ আছে যেখানে নিত্য মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন:- অণু, শোণিত, চাণক্য, স্থাণু, ইত্যাদি। আসলে এর কারণ আলাদা। শব্দ যে ভাবে তৈরি হয় তারই মধ্যে এর কারণ লুকিয়ে থাকে। সেগুলো নিয়ে এখনই কোন বিশ্লেষণ করার দরকার নেই। তোদের কিন্তু এখন এগুলো মনে করেই রাখতে হবে।

এবার ‘ষ’ এর কথা বলি। এ কিন্তু ষত্ববিধি নয়। এখন যা বলব তা ণত্ববিধির একটা ভাগ। আমরা প্রথমে শুরু করেছিলাম যে ঋ, র, আর ষ – এর পর সাধারণত মূর্ধন্য ণ হয়। ঋ আর র – এর কথা তোদের বলেছি। এবার দেখ তৎসম শব্দে ষ এর পরও মূর্ধন্য ণ আসবে। তবে এরও দু একটা ব্যতিক্রম আছে। যাই হোক, তোদের কিছু উদাহরণ দিই। ষণ্ড, ঘর্ষণ, দূষণ, কৃষাণ, অন্বেষণ, বিশ্লেষণ, ভাষণ, বিষ্ণু, কৃষ্ণ ইত্যাদি শব্দগুলো লক্ষ করলে দেখবি যে ষ-এর পরে থাকায় এই বানানগুলোর ‘ন’ মূর্ধন্য ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার ‘ষণ্ড’ শব্দটা লক্ষ করলে দেখবি দুটো কারণেই এই ‘ণ’ এসেছে। ষ-এর পরে আসায় আবার ট বর্গের বর্ণ অর্থাৎ ড-এর সঙ্গে যুক্তভাবে থাকায়।

– বিষ্ণু, কৃষ্ণ এই শব্দের শেষেও কি মূর্ধন্য ণ আছে? কিন্তু দেখে তো বোঝা যায় না। – মান্তু বরাবরের মতই অনুসন্ধিৎসু।

– হ্যাঁ, এই শব্দগুলোতে ‘ষ’ এর পিঠে যে ঞ-এর বোঝাটা আছে তা কিন্তু আসলে মূর্ধন্য ণ। আমাদের অনেকগুলো যুক্তব্যঞ্জন আছে যাদের দেখলে ওই যুক্তব্যঞ্জনে কী কী বর্ণ আছে তা সব সময় বোঝা যায় না। ধর, তোরা যদি লিখতে চাস হ+ন তা হয়ে যাবে ‘হ্ন’, আবার লিখতে চাইলি র+উ, তা দেখাবে ‘রু’, র+ঊ = রূ, ক+ত = ‘ক্ত’, ত+ত= ‘ত্ত’, ঞ+চ = ঞ্চ, ঙ+গ = ঙ্গ এই রকম আরও অনেক আছে। যদিও এখন চেষ্টা চলছে যুক্তব্যঞ্জনগুলো এমন ভাবে লেখা যাতে ওই দুই ব্যঞ্জন আলাদা করে চেনা যায়। কাগজে লিখলে আমিও অবশ্য সে ভাবেই লেখার চেষ্টা করি, অবশ্য সবগুলো সে ভাবে লেখার পদ্ধতি এখনও নেই, তবে টাইপ করতে গেলে সেই প্রয়োজনীয় কি বোর্ডটা হাতের কাছে না থাকায় তা পারি না। এই দেখ, কথায় কথায় অন্য দিকে চলে গিয়েছিলাম। হ্যাঁ, বিষ্ণু বা কৃষ্ণর মূর্তি যা দেখছিস তা কিন্তু মূর্ধন্য ণ যোগ করেই।

এ ছাড়াও ‘ক্ষ’ এর পরেও কোন ‘ন’ এলে তা কিন্তু মূর্ধন্য ণ হবে। কেন বলতে পারিস?

– কারণ এটাও একটা যুক্তব্যঞ্জন, ক+ষ। তাই তো দাদু? – মান্তুর সঙ্গে সঙ্গে জবাব।

– বাঃ! ঠিক বলেছিস। যেমন:- ক্ষণ, ক্ষীণ, ক্ষণিক, তীক্ষ্ণ, সমীক্ষণ, লক্ষণ, ক্ষুণ্ণ, বিষাণ, বিষণ্ন, ইত্যাদি। এই যে ক্ষুণ্ণ, বিষণ্ন এই বানানগুলো দেখছিস, এই শব্দের যুক্তব্যঞ্জন কিন্তু ণ+ন। কেন জানিস? ওই যে আগে তোদের বলেছিলাম ঋ, র, ষ-এর পর যদি জিভের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় এমন কোন বর্ণ থাকে তবে তারপর কোন ‘ন’ এলে তা মূর্ধন্য ণ হয়। এই ক্ষুণ্ণ শব্দটাই লক্ষ কর। ক+ষ+উ+ণ+ন। এখানে ‘ষ’ – এর পর উ তারপর যেই মূর্ধন্য ণ উচ্চারণ করলাম ওমনি জিভ ঠেকে গেল মূর্ধাতে ফলে তারপরে এল দন্ত্য ন। আবার ওই একই কারণে ক্ষেপণ, অক্ষৌহিণী, এই সব বানানে কিন্তু মূর্ধন্য ণ আসবে কারণ ‘ষ’ – এর পরে যে বর্ণগুলো এসেছে সেগুলোর উচ্চারণে জিভের কোন ভূমিকা নেই। এবার আর একটা শব্দের বানানের কথা বলব। শব্দটা ‘ক্ষুন্নিবৃত্তি’। ‘ষ’ -এর পর দুটোই দন্ত্য ন দেখে অবাক হয়েছিস? এর কারণটা কিন্তু একটু চিন্তা করলেই খুঁজে পাবি। মনে রাখিস ‘ত’ বর্গের কোন বর্ণ বদলে গিয়ে ‘ন’ হলে তা সব সময় দন্ত্য ন হবে। উদাহরণ হিসেবে বলি মৃৎ+ময় = মৃন্ময়। এই সন্ধিতে মৃৎ শব্দের ৎ বদলে ন হয়েছে তাই এই শব্দে কিন্তু আমরা ণ লিখব না। এখানেও ঠিক তাই হয়েছে। ক্ষুৎ (ক্ষুধ্) + নিবৃত্তি = ক্ষুন্নিবৃত্তি। আবার দেখ লক্ষ্ শব্দের পর ‘অনীয়’ প্রত্যয় এলেও যেহেতু ‘ক্ষ’-এর পরে ন এসেছে তাই এল মূ্র্ধন্য ণ।

আজও তোদের ষত্ববিধি বলতে পারলাম না। এর পরের দিন নিশ্চয়ই বলব।

৪ Comments

  1. XOSO6688 pretty solid, I won *something* last week, which is more than I can say for other places. Keep an eye out for their promos, they’re usually pretty good. Good luck guys! xoso6688

  2. Gotta say, nh888 is growing on me. The user interface is actually pretty clean, and I haven’t had any issues with lag or glitches. They’ve got a good selection of slots. Definitely worth a shout if you’re looking for a new place to spin: nh888.

  3. Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *