» আরব্য রজনী : রাজা শাহরিয়ার ও তার ভাইয়ের গল্প

অনুবাদক :

রাজা শাহরিয়ার ও তার ভাইয়ের গল্প

প্রাচীন মানুষদের ইতিহাসে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে যে, প্রাচীনকালে ভারত ও চৈনিক দ্বীপপুঞ্জে সাসানীয় সাম্রাজ্যের একজন রাজা ছিলেন। তার ছিল বিশাল সেনাবাহিনী, অসংখ্য প্রহরী, দাস-দাসী ও বিশ্বস্ত অনুচরমণ্ডলী। তার ছিল দুই পুত্র। একজন বড়, আর জন ছোট। তারা উভয়েই ছিলেন দক্ষ অশ্বারোহী বীর। বড়টি তার ভাইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনি রাজ্য শাসন করতেন, প্রজাদের সাথে ন্যায় বিচার করতেন এবং তিনিও তাদের ভালবাসায় ধন্য ছিলেন। তার নাম ছিল রাজা শাহরিয়ার এবং তার ছোট ভাইয়ের নাম রাজা শাহজামান। তিনি ছিলেন পারস্যের সমরকন্দের রাজা।

বিশ বৎসর যাবৎ তারা উভয়েই ন্যায়পরায়ণতার সহিত রাজ্যশাসন করে আসছিলেন। তাদের জীবন ছিল সহজ-সরল, আনন্দঘন ও ঝামেলামুক্ত। অতঃপর, রাজা শাহরিয়ার ছোট ভাই রাজা শাহজামানকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তিনি মন্ত্রীকে আদেশ করলেন শাহজামানকে নিয়ে আসার জন্য। মন্ত্রী বললেন, ‘যথাজ্ঞা, আদেশ পালিত হবে।’

মন্ত্রী নিরাপদে শাহজামানের নিকট পৌঁছে গেলেন এবং তাকে শাহরিয়ারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, তার ভাই তার সাথে দেখা করতে চান।

শাহজামান আসতে রাজি হলেন এবং যাত্রার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। তিনি তখন তার মন্ত্রীকে রাজ্যশাসনের দায়িত্ব দিয়ে ভাতৃরাজ্যে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লেন। সঙ্গে নিলেন তার উট ও খচ্চরগুলো, দাস-দাসী ও প্রহরীদের। তিনি শহরের বাইরের তাঁবু ফেললেন। মধ্যরাতে তার ভুলে যাওয়া কোন একটি জিনিসের কথা মনে পড়ল। তিনি প্রাসাদে ফিরে এলেন। যখন তিনি খাস কামরায় প্রবেশ করলেন, দেখলেন তার স্ত্রী একটি কৃষ্ণাঙ্গ দাসকে জড়িয়ে ধরে তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। অমানিশায় চেয়ে ফেলল তার পৃথিবী। তিনি মনে মনে বললেন, ‘আমি শহর ছাড়তে না ছাড়তেই যদি এমন কাণ্ড হয়, তাহলে আমি ভাইয়ের নিকট কিছুদিন থাকলে এই বেশ্যা রমণী কী কী কাণ্ড করবে?’ তিনি তলোয়ার খাপমুক্ত করে আঘাত করলেন, তার স্ত্রী ও তার নাগর যেমন শুয়েছিল তেমনি অবস্থাতেই তাদের তিনি হত্যা করলেন। ফিরে আসার আগে তিনি প্রহরীদের লাশ দুটি সরিয়ে ফেলতে আদেশ করলেন।

শাহরিয়ারের রাজ্যের সীমানায় পৌঁছে তিনি তার আগমনের সুসংবাদ জানিয়ে দূত পাঠালেন। শাহরিয়ার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে এলেন এবং তাকে আনন্দের সাথে অভ্যর্থনা জানালেন। শহরটি সুশোভিত করা হয়েছিল বর্ণিল সাজসজ্জায়। শাহরিয়ার তার সাথে বসলেন, নানান আনন্দের কথা বললেন। কিন্তু শাহজামান তার স্ত্রীর আচরণের কথা মনে করে বিমর্ষ হয়ে রইলেন। তাকে ফ্যাঁকাসে ও অসুস্থ দেখাচ্ছিল। তার ভাই মনে করেছিলেন, রাজ্য ছেড়ে আসার কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে, তাই তিনি তাৎক্ষণিক কোন প্রশ্ন করেন নি। কিছুদিন পরে, তিনি শাহজামানকে তার লক্ষণগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি বললেন, ‘আমার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে’, কিন্তু তিনি তার স্ত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে কিছু বলতে পারেন নি। তাকে খুশি করার জন্য শাহরিয়ার তাকে তার সাথে শিকারে যাওয়ার আহ্বান করলেন। তিনি রাজি হলেন না, শাহরিয়ার একাই শিকারে গেলেন।

রাজপ্রাসাদের জানালা দিয়ে শাহরিয়ারের বাগান দেখা যাচ্ছিল, শাহজামান যখন তাকিয়ে ছিলেন, একটা দরজা খুলে গেল এবং কুড়িজন দাসী ও কুড়িজন দাস বেরিয়ে এল, এদের মধ্যখানে ছিল শাহরিয়ারের সুন্দরী স্ত্রী। তারা একটি ঝর্ণার পাশে এসে তাদের পরিচ্ছদসমূহ খুলে ফেলল। রমণীরা পুরুষদের সাথে বসে পড়ল। ‘মাসউদ’ রাণী ডাকলেন, একটি কৃষ্ণাঙ্গ দাস বেরিয়ে তার পাশে এল, তারা পরস্পর আলিঙ্গন করল, তারপর পাশাপাশি শুয়ে পড়ল। ততক্ষণে দাসী ও দাসেরা পরস্পর চুম্বন, আলিঙ্গন, শৃঙ্গার, সঙ্গম ও মদিরা পান করতে লাগল। এভাবে দিবাবসান পর্যন্ত চলল।

এসব দেখে শাহজামান মনে মনে ভাবলেন, আরে, আমার ভোগান্তি তো কিছুই নয়। তার ঈর্ষান্বিত বিরহ-বিধুর ভাব তিরোহিত হল। তিনি নিজেকে প্রবোধ দিলেন, আমার দুর্ভাগ্য এর মত এত গুরুতর নয়। এরপর তিনি বিরহ ভুলে পানাহার করতে শুরু করলেন। শাহরিয়ার ফিরে আসার পর ভাইয়েরা পরস্পরকে অভিবাদন জানালেন। শাহরিয়ার দেখলেন, শাহজামানের লাবণ্য ফিরে এসেছে, মুখশ্রীতে গোলাপী আভা, তার আগের ক্ষুধামন্দা নেই, তিনি স্বাভাবিক ভাবেই খাচ্ছিলেন।

শাহরিয়ার বললেন, ‘তুমি তো ফ্যাঁকাশে হয়ে গিয়েছিলে, ভাই, এখন তোমার চেহারার লাবণ্য ফিরে এসেছে, এর কারণ কী?’

‘আমার লাবণ্য হারানোর কারণ আমি বলব’, তার ভাই জবাব দিল, ‘কিন্তু লাবণ্য কিভাবে ফিরে পেলাম, এই সম্পর্কে জানতে আমাকে চাপাচাপি করবেন না।’

‘প্রথমে আমাকে তাই বল, কি কারণে তুমি লাবণ্য হারিয়েছ এবং রোগা হয়ে গিয়েছিলে?’ শাহরিয়ার তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তার ভাই বলতে লাগলেন—

‘যখন আপনি আপনার মন্ত্রীকে আমাকে দাওয়াত করে আনার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তখন আমি আসার জন্য প্রস্তুতি নিলাম এবং শহর থেকে বেরিয়ে পড়লাম; তখন আমার একটি রত্নের কথা মনে পড়ল যেটি আমি আপনাকে উপহার দেবার জন্য রেখেছিলাম, ঐটি আমার প্রাসাদেই রাখা ছিল। আমি সেখানে ফিরে গিয়ে দেখি একটি কৃষ্ণাঙ্গ দাস আমার স্ত্রীর সাথে আমার বিছানায় শুয়ে আছে। আমি তাদের দু’জনকে হত্যা করেই আপনার কাছে এসেছি। এই বিষয়ে আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং এই কারণে আমি লাবণ্যহীন ও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে আমি কিভাবে সুস্থ হয়েছি সেই বিষয়ে জানতে চাইবেন না।’

শাহরিয়ার বিষয়টি জানতে খুব চাপাচাপি করলেন, শেষ পর্যন্ত শাহজামান যা যা দেখেছেন সব খুলে বলেন।

‘আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই’, বললেন শাহরিয়ার। শাহজামান তাকে পরামর্শ দিলেন, তিনি যেন আবার শিকারে যাচ্ছেন এমনটা রটিয়ে দেন এবং তার সাথে লুকিয়ে থেকে দেখবেন যাতে তিনি সত্যটি যাচাই করতে পারেন। শাহরিয়ার তাৎক্ষণিক শিকারে যাওয়ার ঘোষণা করে দিলেন। শহরের বাইরে তাঁবু নিয়ে যাওয়া হল, রাজা স্বয়ং সে তাঁবুতে গিয়ে অবস্থান নিলেন, কর্মচারীদের বলে দিলেন যাতে কেউ তার সাথে দেখা করতে না আসেন। তিনি গোপনে প্রাসাদে তার ভাইয়ের কাছে ফিরে এলেন এবং জানলা দিয়ে বাগান দেখার জন্য অবস্থান নিলেন। কিছুক্ষণপর দাসীরা ও তাদের রাণী নাগরদের সাথে বাগানে এল এবং শাহজামান যেমন বর্ণনা করেছিলেন মাগরিবের আযান পর্যন্ত তেমনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেল।

শাহরিয়ার সরে এলেন এবং তার ভাইকে বললেন, ‘চল, আমরা এখুনি চলে যাই। যতক্ষণ না আমরা অন্য কাউকে খুঁজে পাই যার সাথে একই ধরণের ঘটনা ঘটে, ততক্ষণ আমাদের রাজ্যের কোনও প্রয়োজন নেই। এরচেয়ে আমাদের মরে যাওয়া অনেক বেশি ভাল।’

তারা প্রাসাদের গোপন দরওয়াজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। কিছুদিন ধরে দিন-রাত্রি চলার পর তারা একটা তৃণভূমির মধ্যখানে একটা উঁচু বৃক্ষের নিচে এসে পৌঁছলেন, তার পাশেই সমুদ্র তীরে ছিল একটি প্রসবণ ধারা। তারা প্রসবণ থেকে পান করলেন, এবং আরামের জন্য বসে পড়লেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠল এবং সেখান থেকে একটি আকাশ ছোঁয়া কাল স্তম্ভ বের হয়ে তৃণভূমির দিকে আসতে লাগল। দৃশ্যটি দুই ভাইকে আতঙ্কিত করে তুলল, এবং কী ঘটতে যাচ্ছে তা দেখার জন্য তারা গাছে উঠে গেলেন। তারপর দেখা গেল একটি লম্বা ‘জীন’, বিশাল তার মাথা এবং প্রশস্ত বক্ষ। সে মাথায় করে একটি সিন্দুক বয়ে নিয়ে এল। সে তীরে এসে যে গাছটিতে দুই ভাই লুকিয়েছিল তার নিচে বসে পড়ল। অতঃপর জীন সিন্দুকটি খুলে তার ভিতর থেকে একটি কাটরা বের করল। যখন সে কাটরাটি খুলল, তার ভিতর থেকে সূর্যের মত সমুজ্জ্বল একজন তরুণী বেরিয়ে এল— যে কবি ‘আতিয়া’র দেওয়া চমৎকার বর্ণনার সঙ্গে মানানসই।

সে অন্ধকারে জ্বলে উঠে, এবং দিন দেখা দেয়

এবং সে তার মোহনীয় আলো দ্বারা আলোকিত করে

তার প্রভা সূর্যকে উদিত ও আলোকিত করে

তখন চন্দ্র লজ্জায় নিজেকে ঢেকে রাখে।

যখন পর্দা সরে যায় সে আগমন করে

সব কিছু তাহার হস্তের মধ্যে সিজদা করে।

তার মন্দির থেকে আলোক বিচ্ছুরিত হয়ে

অশ্রুর বর্ষণধারায় সব কিছু প্লাবিত করে।

জীন তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হে অভিজাত স্বাধীন রমণী, যাকে আমি বিয়ের রাতে অপহরণ করে নিয়ে এসেছি, আমি কিছুক্ষণের জন্য ঘুমাতে চাই।’ সে মেয়েটির হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। মেয়েটি গাছের উপরের দিকে তাকাল এবং গাছের উপরে দুই রাজাকে দেখতে পেল। সে তার হাঁটু থেকে জীনের মাথা সরিয়ে মাটিতে রাখল এবং গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। সে তাদেরকে ইশারায় নিচে নেমে আসতে এবং ইফরিতকে ভয় না পেতে বলল।

‘আল্লাহর দোহাই, এমন করো না, আমাদের ক্ষমা করো’, তারা বলল।

কিন্তু সে জবাব দিল, ‘তোমরা না এলে, আমি তাকে তোমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলব এবং সে তোমাদেরকে নিষ্ঠুরতম মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।’

এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল এবং মেয়েটির আদেশ মত নিচে নেমে এল।

মেয়েটি শুয়ে পড়ে বলল, ‘আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো এবং আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করো। নয়ত আমি ইফরিতকে জাগিয়ে দিব।’

ভীত সন্ত্রস্ত শাহরিয়ার তার ভাই শাহজামানকে বলল, ‘ওরে ভাই, সে যা করতে বলছে তাই করো।’

শাহজামান অস্বীকার করে বলল, ‘আমি পারবো না, আপনিই আগে করুন।’

এই ব্যাপারে তারা একে অপরকে ইশারা করতে শুরু করেন, মেয়েটি বলল, ‘কী হল? তোমরা ইশারায় কী বলাবলি করছ?’ তারপর বলল, ‘যদি তোমরা আমার উপর না আস এবং আমার আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ না কর, তবে আমি ইফরিতকে তোমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলব।’

কারণ তারা ভয় পেয়েছিল, তারা পালা করে তার সাথে সঙ্গম করল। সঙ্গম শেষ হলে সে উঠে বসল। তারপর তার জেব থেকে একটি তোড়া বের করল যাতে একটি থোকায় পাঁচশত সত্তরটি নামাঙ্কিত অঙ্গূরীয় ঝুলানো ছিল। সে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমরা কি জান এগুলো কী?’

তারা বলল, ‘আমরা জানি না।’

সে তাদেরকে বলল, ‘এগুলোর সবই আমার সেসব প্রেমিকদের স্মৃতি চিহ্ন যারা এই জীনকে ফাঁকি দিয়ে আমার সাথে যৌনসঙ্গম করেছে, অতএব তোমাদের অঙ্গূরীয় দু’টি দাও আমাকে।’

যখন তারা অঙ্গূরীয় হস্তান্তর করল, তখন সে বলল, ‘এই জীন আমাকে আমার বিবাহের রাতে অপহরণ করে নিয়ে এসেছে এবং একটি কাটরাতে ভরে রাখে, যা আবার একটি সিন্দুকের ভিতর ভরে সাতটি শক্ত তালা লাগিয়ে দেয় এবং এটি উত্তাল সমুদ্রের তলদেশে বিক্ষুব্দ ঢেউয়ের সাথে রাখে। সে যা জানে না তা হল, যখন একজন নারী কিছু করতে চায়, কোন কিছুই তার জন্য বাধা হতে পারে না, যেমন একজন কবি বলেছেন:

রেখ না আস্তা নারীর ’পরে করো না বিশ্বাস প্রতিজ্ঞায়

নির্ভর তাদের রাগ অনুরাগ সব গোপনাঙ্গের সদিচ্ছায়।

মিথ্যা তাদের প্রেম দেখানো ছলনায় ভরা সাজ-পোশাক

শোন, কিস্সা ইউসুফ নবীর ছলাকলা লোকে খুঁজে পাক।

বলতে পার কার ছলনায় আদম খেলেন গোধূম ফল

স্বর্গ ছেড়ে মর্তে এলেন তবু কি বুঝেছেন নারীর ছল?

আরেক কবি বলেছেন:

কি নিয়ে হয়েছে নিন্দা, নিন্দাকে মেলাও তার সাথে

আমি বড় হয়েছি, পাপ তো করিনি, কি হয়েছে তাতে?

প্রেমিক আমি, প্রেমই তো করেছি, করেছি কি দোষ?

আমি তো শুধু তাই করেছি, যা করেছে প্রাচীন পুরুষ।

নিন্দা করছ, বিস্মিত হচ্ছ, তাই কি বলি সাধে

নিয়ে এস তারে যে কভু পড়েনি নারীর ফাঁদে?

দুই রাজা যখন এইসব কথা শুনলেন, তারা বিস্ময়-বিহ্বল হয়ে পড়লেন, এবং একে অপরকে বললেন, ‘যদিও সে জীন, তার সাথে যা ঘটেছে তা আমাদের সাথে যা ঘটেছে তার চেয়েও খারাপ, এই ব্যাপারে যার অভিজ্ঞতা হয়নি সে বুঝবে না।’

মেয়েটিকে সেখানে রেখে তারা শাহরিয়ারের রাজধানীতে ফিরে গেলেন, প্রাসাদে পৌঁছেই তারা ব্যভিচারিণী রাণী, তার দাসী ও তার ব্যভিচারী ক্রীতদাসদের শিরোশ্ছেদ করলেন।

পরবর্তী তিন বছর যাবৎ শাহরিয়ার প্রতি রাতে একজন কুমারী মেয়েকে শয্যাসঙ্গিনী করতেন এবং রাতভর তার সাথে যৌনলীলার মাধ্যমে তার কুমারীত্ব নাশ করে প্রভাতে হত্যা করতেন। এতে প্রজাদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়; তারা তাদের মেয়েদের নিয়ে পালিয়ে যায় এবং শহরে আর কোন বিবাহযোগ্যা মেয়ে অবশিষ্ট রইল না। অতঃপর, যখন মন্ত্রীকে একটি উপযুক্ত কুমারী মেয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হল, তখন তিনি অনেক অনুসন্ধান করলেন কিন্তু বিবাহযোগ্যা একটি কুমারী মেয়েও পেলেন না। তিনি শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে আসলেন। রাজা তার সাথে কী আচরণ করবেন, এই ভেবে তিনি হতাশ ও ভীত হয়ে পড়লেন।

মন্ত্রীর দুই কন্যা ছিলেন, বড়টির নাম শাহরাজাদ এবং ছোটটির নাম দুনিয়াজাদ। শাহরাজাদ বিভিন্ন গ্রন্থাদি ও ইতিহাস, অতীতের রাজাদের কাহিনী এবং পূর্ববর্তী লোকেদের গল্প-গাঁথা পড়তেন, বই সংগ্রহ করতেন। বলা হয় যে, তার সংগ্রহে এমন হাজার হাজার বই ছিল যা প্রজাসাধারণ, রাজা ও কবিদেরও হতবাক করে দিত। তিনি তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এমন কী ঘটেছে যাতে তিনি দুঃশ্চিন্তগ্রস্ত ও ভীষণ্ণ হয়ে আছেন? একজন কবির পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে বললেন:

উদ্বিগ্নকে বলে দাও: ‘উদ্বিগ্নতা স্থায়ী হয় না

এবং আনন্দ যেমন চলে যায়, উদ্বিগ্নতাও চলে যায়।’