» মান-অভিমান

মুদিত নয়নে দেখে সেদিন নদীর ধারে

মনে ক্ষীণ দ্বিধা রেখে অবশেষে শুধি তারে—

“যে চোখে স্বপন খুঁজে পায় পথিকের মন,

আছ কেন তাহা বুজে, করেছ কি কোনো পণ?”

“চৈতের প্রহরবাদে মুদে রাখিলাম আঁখি;

ঠাকুরের অপবাদে নাহয় থাকুক বাকি।

আমার বোজানো আঁখ না-আনুক সর্বনাশ;

এই চোখে খুঁজে পাক কোনোজন তার আশ।”

বুঝিলাম— রবিবাণী হতাশ করেছে তারে,

তাই তো সে অভিমানী; কে মান ভাঙাতে পারে!

করে দেখিব কি তবে ভাঙিতে তাহার মান?

যা হবার তাই হবে; কে-বা জানে আনজান!—

“রমণীর আঁখিতুলি নাহি কভু সর্বনাশে;

নর নিজ গুণ ভুলি পতনের বানে ভাসে।

কালো-নীল মণি জোড়া জীবন কভু-না পোড়ায়;

তাহা অনুরাগে মোড়া; উদাস হৃদয় জুড়ায়।”

“নিজের জুড়াতে হৃৎ রচো নারীগুণগান

আর কতশত গীত; দাও তারে যশ-মান।

মিটিয়া যাইলে পরে পুষে-রাখা সব সাধ,

দারুণ বাহনা করে সরাইয়া লও কাঁধ।

অথচ বলিবে সদা, ‘রবো সাথে সুখে-দুখে।’

নয় কি তা ফাঁকা কথা বলে চলো মিছে মুখে?

না-গেছ ভুলিয়া তুমি রবিঠাকুরের বাণী;

আদরে ললাট চুমি শেষে দোষ দেবে জানি।”

ধিরযেরে খুন করে মুখেতে ফুটিয়ে বুলি

কথাসব দৃঢ় স্বরে কয়ে দিলো আঁখি খুলি।

তারে কী-বা দেব দোষ; কথা নয় পুরো মিছে—

করিতে মেজাজ খোশ নর ছোটে নারীপিছে।

তাবৎ ক্ষমতা-জ্ঞান পায়ে ঠেলে প্রেমেহেরে

ট্রয়ের প্যারিস জ্যান্ চুনেছিল হেলেনেরে।

তবুও চাপিল দায় রমণী হেলেন ’পরে—

‘নারী রূপ-লালসায় নগরী বিনাশ করে।’

যদিও চরণদ্বয়ে নাশেতেই ছিল আশ;

প্রেমে প্রতারিত হয়ে সব লাগে ছাইপাঁশ।

সাহস করিয়া শেষে হাতে ফুল দিয়ে গুঁজে

পাশে বসে বঁধুবেশে আমিও নয়ন বুজে

তার কাঁধে রেখে মাথা কলাম ভাঙিতে ভুল—

“নারীর আসল গাথা রচেছে তো নজরুল।

যে পুরুষ দেশে দেশে খুঁজিয়াছে নিজ রাহা,

অবশেষে নারীতে সে পেয়ে গেছে পুরো জাহাঁ।

আপন আঁচলতলে দিয়ো তারে থোড়া মায়া।

ডাল ভেঙে দেয় বলে তরু কি না-দেয় ছায়া?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *