কৃষি বিষয়ক অনেক গ্রুপে অনেকেই গাছের পুষ্টি-ঘাটতি নির্ণয় কিভাবে করবেন তা জানতে চান। ফেইসবুকে অনেকে কিছু কিছু ছবি দিয়ে ব্যাপারটা বুঝান। কিন্তু সেসব ছবিতে বিস্তারিত তেমন কিছু থাকে না। আমি নিজে কৃষি বিজ্ঞানী নই। তবুও আগ্রহ থেকে সামান্য পড়াশোনা করে একটুখানি লিখছি। আশা করি অনেকের উপকারে আসবে। কৃষি বিজ্ঞানী বন্ধুরা চাইলে আরও কিছু যোগ করতে পারেন।
গাছের পুষ্টি-ঘাটতি মূলতঃ ৪-৫ ভাবে গাছে দেখা দিতে পারে:
- Chlorosis বা পাতার সবুজ রং পরিবর্তন হয়ে হলুদ বা সাদা হওয়া;
- Necrosis বা পাতায় মরা মরা দাগ দেখা দেওয়া বা পাতা জ্বলে যাওয়া রং পরিবর্তন;
- Anthocyanosis বা পাতার সবুজ রং পরিবর্তন হয়ে বেগুনী রং হওয়া;
- Stunting বা পাতাসহ গাছের আকৃতি ছোট হয়ে যাওয়া;
- Root zone shortening বা গাছের মূলের পরিধি কমে যাওয়া।
এখানে ১-৩ নং নিয়েই আলোচনা করা হবে যেহেতু এগুলো খালি চোখে সহজেই দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা জানি গাছের মোট ১৭ টি আবশ্যিক পুষ্টি উপাদান লাগে। এর মধ্যে বাতাস ও পানি থেকে আসে ৪ টি: C, H, O N. আর বাকি গুলো সরাসরি মাটি থেকে আসে যাদেরকে মিনারেলও বলা হয়: P, K, Ca, Mg, S, Fe, Zn, Ni, Cu, Mn, B, Mo, Cl.
(নাইট্রোজেন বাতাস থেকে আসলেও গাছ তা সহযোগী অনুজীবের সাহায্যে মূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পানির বাষ্পের মাধ্যমে আসলেও গাছ সাধারণত মূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে। কার্বন আসে বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে গাছ যা পাতার মাধ্যমে সূর্যালোকের সাথে গ্রহণ করে)।
এখানে ১২টি অতি আবশ্যিক উপাদানের পুষ্টি-ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রথমেই দেখা যাক কোন্ কোন্ উপাদানের পুষ্টি-ঘাটতিতে পাতায় বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়।
- N, P, K, Mg, Mo এর ঘাটতি: “শুধুমাত্র নীচের দিকের ম্যাচিউর, পরিণত ও পুরাতন পাতায়” রং পরিবর্তন;
- Fe, Mn, Cu, S এর ঘাটতি: “শুধুমাত্র নূতন পাতায়” রং পরিবর্তন;
- Zn এর ঘাটতি: “নূতন ও পরিণত উভয় পাতায়” রং পরিবর্তন;
- Ca, B এর ঘাটতি: “কুঁড়ি অথবা একেবারে নূতন বের হওয়া পাতার” রং ও আকৃতি পরিবর্তন।
এর পরের পর্বে ঘাটতির লক্ষণ গুলো নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হবে।
তবে মনে রাখতে হবে বিষয়টা এতোটা সরলরৈখিক নয়। শস্যভেদে লক্ষণের তারতম্য হতে পারে। তাই, অভিজ্ঞ কৃষি বিজ্ঞানীর পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে সঠিক নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক ও জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে সাধারণত এগুলোর ঘাটতি হয় না এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না।
এবার ১২ টি আবশ্যক উপাদানের ঘাটতির লক্ষণ গুলো আলোচনা করা যাক।
শুধুমাত্র পরিণত পুরাতন পাতায় দেখা লক্ষণ সমূহ (N, P, K, Mg, Mo ঘাটতি)—
- নাইট্রোজেন (N): নীচের দিকের পরিণত পাতা শিরা/উপশিরাসহ পাতা হলুদ হয়ে যাবে। তবে, প্রাথমিক দিকে পাতার অগ্রভাগ বা আগায় V-আকৃতির হলুদ অংশ দেখা দিবে।
- ম্যাগনেশিয়াম (Mg): নীচের দিকের পরিণত পাতার শিরা বাদে শিরা/উপশিরার মধ্যবর্তী অংশ হলুদ হয়ে যাবে। শিরা উপশিরার সবুজ রং থাকবে।
- পটাশিয়াম (K): নীচের দিকের পরিণত পাতা হলুদ হতে পারে, নাও হতে পারে কিন্তু পাতার দুইধারে মরা মরা দাগ শুরু হবে এবং ধীরে ধীরে পাতার দুইধার জ্বলে বা পুড়ে যাওয়ার মতো মনে হবে।
- মলিবডিনাম (Mo): মলিবডিনাম ঘাটতি হলে সাথে নাইট্রোজেন ঘাটতি দেখা দিবে অর্থাৎ প্রথমে পরিণত পাতার আগা শিরা উপশিরাসহ হলুদ হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আরও একটা লক্ষণ দেখা দিবে, তা হলো পাতার দুই শিরার মাঝের জায়গাগুলোতে মরা দাগ দেখা দিবে।
- ফসফরাস (P): নীচের দিকের পরিণত পাতার রং পরিবর্তন হয়ে বেগুনী রং ধারণ করবে বা বেগুনী দাগ দেখা দিবে।
শুধুমাত্র নূতন পাতায় দেখা লক্ষণ সমূহ (Fe, Mn, Cu, S ঘাটতি)—
- আয়রণ (Fe): নূতন পাতা শিরা উপশিরাসহ বাদামী কিংবা সাদাটে রং দেখা দিবে।
- ম্যাঙ্গানিজ (Mn): নূতন পাতা শিরা উপশিরাবাদে হলুদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ শিরা উপশিরা সবুজ থাকবে।
- কপার (Cu): নূতন পাতা হলুদ হয়ে যাবে তবে শিরা উপশিরা গুলো সামান্য হলুদ হবে।
- সালফার (S): নূতন পাতা শিরা উপশিরাসহ পুরা পাতা হলুদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ শিরা উপশিরার রং পুরাপুরি হলুদ হয়ে যাবে।
নূতন ও পুরাতন উভয় পাতায় দেখা লক্ষণ সমূহ (Zn ঘাটতি)—
- জিঙ্ক (Zn): নূতন ও পুরাতন উভয় পাতায় মরা দাগ দেখা দিবে এবং সেই সাথে পাতার দৈর্ঘ্য বরাবর লম্বা বাদামী মরা দাগের লাইন দেখা দিবে।
শুধুমাত্র কুঁড়ি ও সদ্য বের হওয়া পাতায় দেখা লক্ষণ সমূহ (B, Ca ঘাটতি)—
- বোরণ (B): কুঁড়ি অথবা সদ্য বের হওয়া পাতা কুঁকড়ে যাবে এবং হুকের মতো বেঁকে যাবে। সেই সাথে খুব সামান্য মরা দাগ দেখা দিতে পারে।
- ক্যালসিয়াম (Ca): কুঁড়ি অথবা সদ্য বের হওয়া পাতা কুঁকড়ে যাবে এবং সেই পাতায় মরা দাগ দেখা দিবে। এছাড়াও কচি পাতাগুলো একে অপরের সাথে জড়িয়ে যাবে। কচি পাতার ধারগুলো মরে গিয়ে ফেটে যেতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে বিষয়টা এতোটা সরলরৈখিক নয়। শস্যভেদে লক্ষণের তারতম্য হতে পারে। তাই, অভিজ্ঞ কৃষি বিজ্ঞানীর পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে সঠিক নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক ও জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে সাধারণত এগুলোর ঘাটতি হয় না এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না।
কৃতজ্ঞতা: ড. অমিত ভাটনগর, অধ্যাপক, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, জি বি পান্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত।